নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে টার্গেটকৃত মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া বিদেশি একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ‘ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট’ (সিআইডি)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- নাইজেরিয়ার নাগরিক মরো মুহাম্মদ ও মরিসন এবং ঘানার নাগরিক সিসম ও অ্যান্থনি। মঙ্গলবার রাতে রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান ও ভাটারা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) সৈয়দা জান্নাত আরা।
এ সময় জান্নাত আরা বলেন, খেলোয়াড় ও স্টুডেন্ট ভিসার মতো স্বল্পমেয়াদি ভিসায় এসে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করে ফেসবুকে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। প্রতারণার শিকার একজন ভিকটিমের অভিযোগের সূত্র ধরে ওই চার বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৮ বছর আগে খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশে আসেন মরো মহাম্মদ ও মরিসন। বাকি দুই ঘানার নাগরিক সিসম ও অ্যান্থনি এসেছিলেন চার বছরের স্টুডেন্ট ভিসায়। তাদের কেউই ভিসার মেয়াদ বাড়াননি। অবৈধভাবে বসবাস করে তারা প্রতারণাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা অভিনব কায়দায় বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে প্রথমে ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করে। বন্ধুত্বের একপর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ পার্সেল উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। এমনকি এসব মূল্যবানসামগ্রী এয়ারলাইন্স বুকিং দেওয়ার একটি ভুয়া ডকুমেন্টও পাঠায়। মিলিয়ন ডলারের মূল্যবানসামগ্রীর প্রলোভন দেখিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে তা কাস্টমস থেকে গ্রহণ করতে বলে। এ সময় তাদের অন্য সহযোগীরা নিজেদের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে উপহারসামগ্রী নেওয়ার জন্য শুল্ক পরিশোধের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে। ভিকটিম উপহার গ্রহণ করতে না চাইলে আইনি জটিলতার ভয় দেখায়। ফলে অভিযোগকারী ভিকটিম তাদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ৫৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সারা দেশে অসংখ্য ভিকটিমের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা গত কয়েক মাসের মধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে।
সিআইডি কর্মকর্তা জান্নাত আরা বলেন, বিদেশিদের বেশ কয়েকটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করে এলেও গ্রেফতারের পর এ দেশে তাদের অবস্থানের বৈধ কোনো কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট দেখাতে পারেনি।
মূলত তারা ট্যুরিস্ট, খেলোয়াড়, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে পরে স্থানীয় কিছু এজেন্টের সহায়তায় এ ধরনের প্রতারণা করে আসছিল। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে স্বল্পমেয়াদি ভিসায় আসা আফ্রিকানদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও প্রতিবছর তারা কী করে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসবির (পুলিশের বিশেষ শাখা) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।